Usefulness of Chickpea (ছোলার উপকারিতা)Best tips & tricks for human health

কাচা ছোলার উপকারিতাঃ



❤❤বাজারে বহুল পরিচিত স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে   বুট বা ছোলার বেশ সুনাম আছে।।। এটা খেতে  সুস্বাধু ও বটে এবং শক্তি যোগান দেয়।  কাঁচা ছোলার গুণাগুণ আমরা সবাই জানি। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আমিষ বা প্রোটিন আছে প্রায় ১৮ গ্রাম শর্করা, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৬৫ গ্রাম এবং ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম। ছোলা খাওয়ার পর খুব তাড়াতাড়িই হজম হয়ে গ্লুকোজ হয়ে রক্তে চলে যায় না বরং অনেকটা  সময় নেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা খুবই প্রয়োজন।। তাছাড়া ছোলার ফ্যাটের  বেশির ভাগই পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না এবং প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়া ছোলায় আরও  বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবন পাওয়া যায়।। আমরা জানি, প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলাতে ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, এবং ভিটামিন ও ১৯০ মাইক্রোগ্রাম আছে।  এছাড়াও ভিটামিন বি­­-১, বি-২, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস আছে। এগুলো সবই মানব দেহের  জন্য উপকারি।।

রর্তমানে সাধারণত দুই প্রকারের ছোলা বাজারে পাওয়া যায়১. দেশী ছোলা ও ২.কাবুলী ছোলা।। দেশী ছোলা আকারে ছোট ও শক্ত এবং কাবুলী ছোলা একটু বড় আকারের হয় ও একটু নরম প্রকৃতির । 

আমাদের ইফতারীর ছোলা মূলত দেশী ছোলা।শুধুমাত্র রোজা আসলেই নয়, আজকাল আমরা সবসময় ছোলা খাই এবং খাওয়া উচিত। কাবুলী ছোলা জন্মায় আফগানিস্তান, দক্ষিণ ইউরোপ- এসব স্থানে। ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। ছোলায় আমিষের পরিমাণ মাংস বা মাছের আমিষের পরিমাণের প্রায় সমান। তাই খাদ্য তালিকায় ছোলা থাকলে আমিষের অভাব পরে না। তাই কাঁচা ছোলা সবার জন্য ভীষণ উপকারী।  ছোলার ডাল, তরকারিতে ছোলা, সেদ্ধ ছোলা ভাজি, ছোলার বেসন ও অন্যান্য উপায়ে ছোলা খাওয়া যায়। । সেজন্য হজমশক্তি বুঝে ছোলা হোক পরিবারের বন্ধু।।

ভালোমানের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার হলো ছোলা। এটি  কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়। তবে কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে একই সঙ্গে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক যাবে। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায় আর অ্যান্টিবায়োটিক যেকোনো মানুষের অসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। 

##ছোলার উপকারি গুণাগুন গুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১.হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে: 
অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছেন যে খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যায়। ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্য আঁশ আছে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন বি-৬ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এর ডাল আঁশসমৃদ্ধ যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৪০৬৯ মিলিগ্রাম ছোলা খায়, হৃদরোগ থেকে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৯% কমে যায়।

২.ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ 
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল অল্পবয়সী নারীরা বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশন এর প্রবণতা কমে যায়। যেহেতু ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক এসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এছাড়া ছোলা বয়সসন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্টের কার্যক্ষমতা  ভাল রাখতেও সাহায্য অনেক সাহায্য করে।।

৩.রক্ত চলাচল: 
অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন ১/২ কাপ ছোলা খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে থাকে।।
কোলেস্টেরল মাত্রা কমানো: 
ছোলা শরীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।তাছাড়া প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়া ছোলায় আরও  বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাওয়া যায়।

কোরিয়ান গবেষকরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে নিজিদেরকে মুক্ত রাখতে পারেন। এছাড়া ফলিক এসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে এ্যজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়। 

ছোলায় খাদ্য-আঁশও আছে বেশ। এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। খাবারের আঁশ হজম হয় না। এভাবেই খাদ্যনালী অতিক্রম করতে থাকে। তাই পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এবং পায়খানা নরম থাকে।তাই হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা রাখে।।

৬.ডায়াবেটিসে প্রতিরোধে: 
ছোলায়  উচ্চ আঁশ থাকায় তাই এটি ডাল হিসেবে অনেক উপযোগী। গবেষণায় দেখা গেছে, ছোলা খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা খুব ধীরে ধীরে বাড়লেও ছোলার আঁশ রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। এজন্য ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে ছোলার উপকার বেশ গুরুত্বপূর্ণ।।

৭.যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ও কাশি সারাতে ভূমিকা: 
ছোলা যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসনালিতে জমে থাকা পুরনো কাশি বা কফের জন্যেও এটি ভালো কাজ করে।। ছোলা বা বুটের ডাল ও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ থাকার কারণে ছোলা মানুষের যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। 

৮.অস্থির ভাব দূর করেঃ 
ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়ে যায়।

৯.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ  
কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয় এবং আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায় এবং অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো অসুখের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

১০.মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করেঃ 
ছোলাতে ভিটামিন ‘বি’ও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ মেরুদণ্ডের ব্যথা, স্নায়ুর দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে।।

১১.জ্বালাপোড়া দূর করেঃ  
ছোলাতে সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে।। তাই সালফার মাথা গরম হয়ে যেতে দেয় না। হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমায় তথা হাত ও পায়ের তালুর জ্বালাপোড়া দূর করে থাকে।।
শরীরে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে: ছোলা শরীরে শক্তির যোগান দিতে থাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে পাওয়া যায় ৩৬০ ক্যালরির থেকেও বেশি শক্তি।

১২.ডাল হিসেবে: 
ছোলা পুষ্টিকর একটি ডাল। এটি মলিবেডনাম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর চমৎকার উৎস। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ফলেট এবং খাদ্য আঁশ আছে সেই সাথে আছে আমিষ, ট্রিপট্যোফান, কপার, ফসফরাস এবং আয়রণ আছে।।

১৩.রমজানে ছোলার চাহিদাঃ
 আসলেই ছোলা হলো রমজান মাসে ইফতারের সময় জনপ্রিয় খাবার।। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকার কারণে রমজান মাসে ছোলা একটি অত্যন্ত উপকারি খাবার।।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, হাড় শক্ত করতে এবং দেহকে দৃঢ় করতে ছোলার ভূমিকা আছে।।

##সবাইকে ধন্যবাদ।।
লেককঃ মোঃহাফিজুর রহমান


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ